ফেব্রুয়ারি মানেই বাঙালির ভাষা জয়ের মাস। ভাষা জয়ের সত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও সব জায়গায় চোখে পড়ে ভুল বানান ও ইংরেজিতে লেখা ব্যানার, পোস্টার-সাইনবোর্ড। বাদ নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানও। প্রতিনিয়ত ভুল বানান দেখে অভ্যস্ত হচ্ছে এখানকার মানুষ। শিশুদের ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
সরেজমিনে বিভিন্ন শহরে দেখা যায়, শহরজুড়ে সর্বত্রই এখন বিদেশি ভাষা ব্যবহারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বড় শপিং মল থেকে মুদি দোকানগুলোর বেশিরভাগেরই নামে আছে ইংরেজি ভাষার দাপট। ইংরেজি সাইনবোর্ড ছাড়াও বেশিরভাগ দোকানের সাইনবোর্ডে বাংলা বানান ভুল। জেলার ৫টি উপজেলাতেও একই অবস্থা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ে প্রধান ফটকে লাগানো সাইনবোর্ডে লক্ষীপুর (শুদ্ধ বানান লক্ষ্মীপুর) বানান ভুল।
শুধু সরকারি এই দপ্তর নয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ জেলার সর্বত্রই এখন ভুল বানানের মহড়া চলছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও দোকানের সাইনবোর্ড, ব্যানার ও দেয়াল লিখনে একটু মনোযোগ দিলেই দেখা যায় বাংলা শব্দের করুণ পরিণতি। রয়েছে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ডও। এমনকি ভাষার ব্যবহারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও অমান্য করছেন কেউ কেউ। সাইনবোর্ডে লেখা বেশিরভাগ বানানেই ই, ঈ, স এবং ষ এর ভুল বানান দেখা যায়। এতেই যেনো অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন সবাই।
ইংরেজি সাইনবোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলা লেখায় দেখা যায় অসংখ্য ভুল বাংলার ব্যবহার। যেমন- লাইব্রেরী, কোম্পানী, ইন্ডাষ্ট্রি, রেষ্টুরেন্ট, ফার্মেসী, ইন্সটিটিউট, সরকারী, ষ্টেশনারী, অনুষ্টান ইত্যাদি। যার শুদ্ধ বানান লাইব্রেরি, কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রি, রেস্টুরেন্ট, ফার্মেসি, ইনস্টিটিউট, সরকারি, স্টেশনারি, অনুষ্ঠান।
আবার ভাষার মাসে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ না লিখে ভুল বানানে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’ লেখা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায়, বিদেশি ভাষায় লেখা নামফলক, বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, সাইনবোর্ড, তোরণ ইত্যাদি। এগুলো দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের রয়েছে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম আর তাজা রক্ত ঢেলে প্রাণ উৎসর্গ করার ইতিহাস।
শিক্ষার্থীরা জানান, একেক জায়গায় একেকরকম বাংলা বানান থাকায় প্রতিনিয়তই সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। এজন্য বাংলা ভাষা ও অভিধানের অপমান হচ্ছে। তাদের দাবি, বাংলা একাডেমি থেকে নির্দিষ্ট বানান ঠিক করে এখন প্রচারণা করা সময়ের দাবি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, বহু কষ্টে অর্জিত আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলা। ভাষার জন্য আমরা রাজপথে সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু আজ এই ভাষার প্রতি অমর্যাদা ও অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।