লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে তিনদিন ধরে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অনশন করছেন।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারিতে) বিকেলে উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘনেশ্যাম এলাকার পুলিশ সদস্য রাব্বি আল মামুন ওরফে ইশতিয়াক বুলবুলের বাড়িতে গেলে ওই কলেজ ছাত্রীকে অনশন করতে দেখা যায়। এর আগে গত রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুর থেকে স্ত্রীর সীকৃতি পেতে ওই কলেজ ছাত্রী সেখানে অবস্থান করে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রাব্বি আল মামুন ওরফে ইশতিয়াক বুলবুল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘনেশ্যাম এলাকার আল আমিনের ছেলে ভুক্তভোগী ওই কলেজ ছাত্রী জানান,
২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটনের পল্টন থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে ডিএমপির রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এমটি শাখায় পিওএমএ পদে কর্মরত কনস্টেবল (বিপি-৩৩৭০৩) রাব্বি আল মামুন ওরফে ইশতিয়াক বুলবুলের সাথে সরকারি বিধি ও শরিয়া মোতাবেক আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী হিসেবে এক সপ্তাহ আমরা পল্টন থানার পাশে একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করি। পরে সে বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে নিয়ে আসবে এমন আশ্বাসে সে তার বাবা মা ও আমার বাবার সাথে সাথে কথা বলে সে আমাকে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি আসার পরে দুই তিন মাস সে আমার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে ও স্ত্রী হিসেবে সবকিছু দেয়।
এর কিছুদিন পরে সে বলে আর কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তোমাকে ঢাকায় নিয়ে আসব তুমি এখান থেকেই অনার্স পরীক্ষা দিবে। আমি সরল বিশ্বাসে তার উপর ভরসা করে থাকি। কিন্তু ৫-৬ মাস যেতে না যেতেই সে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তখন আমি তার অফিসে গিয়ে আমাকে তার বাসায় নেয়ার জন্য চাপ দেই। তখন সে আবারও নানান টালবাহানা করে আমাকে রংপুরে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এক বছর যেতে না যেতেই আমার সাথে সে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে আমাকে স্ত্রী মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে আমার কাবিননামা সহ সকল ডকুমেন্ট গায়েব করে ফেলে। তবে আমার ফোনে এবং আমার কাছে রক্ষিত ডকুমেন্ট আমি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থাপন করলে তারা আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তোলার জন্য বলে। কিন্তু সে আজকাল করে আমাকে বাড়িতে নিচ্ছে না এবং স্ত্রীর মর্যাদাও দিচ্ছে না। তাই আমি স্ত্রীর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে তার বাড়িতে এসে অবস্থান করছি।
তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য রাকিবুল ইসলাম পলাশ জানান, স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে রোববার বিকেলে রংপুরের একটি মেয়ে আল আমিনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল রাব্বি আল মামুনের বাড়িতে আসলে বাড়ির লোকজন সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এসময় মেয়েটি বাড়ির দরজার সামনে অবস্থান নেয়। তিনি আরো জানান, ওই ছেলের উচিত বিচার হওয়া দরকার একটি মেয়ে তিনদিন ধরে তার বাড়িতে এসে দরজার সামনে বসে আছে আর সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার আশা করি। ইউপি সদস্য রাকিবুর ইসলাম পলাশ আরো জানান, মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য আমি পুলিশকে জানিয়ে ওই রাতে গ্রাম্য পুলিশ দিয়ে পাহারা রেখেছি।
যাতে মেয়েটির কোন ক্ষতি না হয়। এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য রাব্বি আল মামুন ওরফে ইশতিয়াক বুলবুলের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই মেয়ের সাথে ঢাকায় আমার যা হয়েছে সেগুলো ঢাকায় আবার সমাধান হয়েছে। আমি তার সাথে যা করেছি তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে শাস্তিও দিয়েছেন। ওই মেয়েকে আমি বাড়িতে উঠতে দেব না। সাংবাদিকদের যা করার আছে বা ওদের পরিবারও যদি কোন কিছু করতে পারে করুক এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোন পক্ষ থানায় লেখিত কোন অভিযোগ করেনি। তবে কোন পুলিশের ব্যক্তিগত বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোন হস্তক্ষেপ করা হয় না।
তবে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ করে আর তা যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম বলেন, বিভিন্ন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অবস্থান করছেন এমন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানিয়েছি ভুক্তভোগীরা বিচার পাক এটা আমরা সবসময় কামনা করি।
প্রধান কার্যালয়ঃ বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
কর্পোরেট অফিসঃ
চৌধুরী ভিলা, বাসস্ট্যান্ড, জলঢাকা, নীলফামারী।
ইমেইলঃ taxashim@gmail.com
চৌধুরী মিডিয়া গ্রুপ এর একটি প্রকাশনা
Copyright © 2024 AlifNews24.net. All rights reserved.