মিষ্টি কুমড়া ফল জাতীয় সবজি। এটি কম বেশি আমাদের সকলের পছন্দ। সাধারণত এর বীজ আমরা কার্তিক মাসে রোপন করে থাকি। বীজ রোপনের ৬ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এ সবজি আবাদে তেমন একটা খরচ হয় না। তবে এটি আবাদ করে কৃষক অনেক আয় করতে পারেন। স্বল্প খরচ আর লাভ বেশি হওয়ায় কুমড়ো আবাদে ঝুকছে নীলফামারীর কৃষক। গতকাল নীলফামারীর ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামে গেলে দেখা যায় শুধু মিষ্টি কুমড়ার আবাদ।
সবুজে সমারোহে শোভা পাচ্ছে দিগন্ত জোড়া মাঠ। সতেজ,সবল ও সুন্দর কুমড়া গাছের ডাল পালা ও পাতায় ভরে গেছে মাঠ। ওই গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল হান্নান,মোঃ মতিয়ার রহমান,আব্দুস সাত্তার, মোঃ শফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও সোনা মিয়া বলেন, প্রতি বছর তারা মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে থাকেন। এ বছরও করেছেন। তারা জানান, মিষ্টি কুমড়ার আবাদে তেমন একটা খরচ হয় না। ফলন ভাল হোক আর খারাপ হোক লোকসান হয় না। যদি ফলন ভাল হয় তাহলে প্রতি বিঘাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। তারা কয়েক ভাইসহ প্রতিবেশী মিলে নিজ নিজ জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছেন।
এতে সব মিলে দুই একর চল্লিশ শতক জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন তারা। গত বছর ফলন বেশ ভাল ছিল। এ বছর গাছের ডালপালা ও পাতা সবে সবল হলেও ফলন তেমন হয়নি। কারণ অতিরিক্ত কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডা কাল হয়ে দাঁড়ায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কাজ হচ্ছে না কোন। কৃষক হান্নান জানান, কুমড়ো আবাদ করলে ফসল বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। পাইকাররা জমিতে এসে কিনে নিয়ে যায়। কোন কোন পাইকার আবার অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকে। আমি এ বছর দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়োর আবাদ করেছি।
ফলন ভাল হলে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা কুমড়ো বিক্রি করে আয় হবে। গত বছর আমি এক বিঘা জমির কুমড়ো বিক্রি করেছি ৫০ হাজার টাকা। গত বছরের চেয়ে এ বছর বাজারে কুমড়োর দাম অনেকটা বেশি। নীলফামারী কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মানবদেহের পুষ্টির যোগান দিতে অসাধারণ এক উৎস মিষ্টি কুমড়ো। মিষ্টি কুমড়ার আবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। কারণ এ আবাদে তেমন একটা ব্যয় হয় না। ফলে লাভ বেশি থাকায় কৃষকরা এ আবাদে ঝুকছে। সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলেমুল বাশার বলেন, মিষ্টি কুমড়ো খাওয়ার নানা উপকারিতা আছে। মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজে থাকে ভিটামিন সি ও ই, আয়রন,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস,পটাসিয়াম, জিঙ্ক, প্রোটিন ও ফাইবার যা শরীরের জন্য দারুন উপকারী।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুর রহিম জানান,মিষ্টি কুমড়ায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানবদেহকে ক্যান্সার ও আলঝেইমার রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা নানা উপাদান মানুষের রক্ত ও পাকস্থলীকে বিশুদ্ধ করে। এ সবজি মস্তিষ্কের জন্যও বেশ উপকারী। মিষ্টি কুমড়ার খোসায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কম ক্যালরি এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ডায়েটরি ফাইবার পেটের রোগ নিরাময় করে। গরমে কুমড়া খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। দীর্ঘস্থায়ী জ্বরেও কুমড়া বেশ কার্যকর।
মিষ্টি কুমড়ায় উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন ও লুটেইন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। মিষ্টি কুমড়া খেলে ত্বক সুস্থ থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন ই এবং সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে সূর্যের বিপজ্জনক রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা পায়। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষন জানান,মিষ্টি কুমড়া এক ফল জাতীয় সবজি। এটির তরকারি খেতে মিষ্টি ভাব লাগে। এটির অনেক গুনাগুনও রয়েছে। এ উপজেলায়ও বাড়ছে মিষ্টি কুমড়োর আবাদ।