আমরা প্রতিদিন টাকা দিয়ে বাজার থেকে বহন করে নিয়ে আসছি রোগ বালাই। অবাক করার কথা হলেও এটা সত্যি, আমরা বাজার থেকে খাদ্য ক্রয়ের সঙ্গে রোগ নিয়ে আসছি। খাবারটি যার মাধ্যমে নিত্যদিনে বাজার থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছি, সেটি হচ্ছে প্লাস্টিক।
প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জন করুন- এই স্লোগানের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের পরিচিতি থাকলেও কোনো ভাবেইনপ্লাস্টিক বন্ধ হচ্ছে না। কেননা প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
বিশ্বে মানুষ প্রতি মিনিটে প্রায় এক মিলিয়ন প্লাস্টিকের বোতল ক্রয় করে এবং প্রতি ঘণ্টায় এক বিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে। স্বল্প খরচ, স্থায়ীত্ব, প্রক্রিয়াকরণের সহজতা, হালকা ওজন এবং উচ্চ তাপ ও বৈদ্যুতিক নিরোধক প্লাস্টিককে ব্যক্তি এবং বিপুল সংখ্যক শিল্প খাতের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে এটি আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্লাস্টিক ইতিমধ্যে বাস্তুতন্ত্র, মানব সম্প্রদায়, প্রাণিকুল এবং পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থাকে একটি গুরুতর হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি এ যৌগগুলো মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া তৈরি করে। প্লাস্টিকের বোতল বা ডায়পারে বেশি ব্যবহৃত বিসফেনল ‘এ’ থ্যালেট প্রজননতন্ত্রের ক্ষতি করে।
প্লাস্টিক কাপে বা পাত্রে গরম পানি পান করলে যে ডাইঅক্সিন শরীরে ঢোকে তা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উল্লেযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এবং মহিলাদের গাইনি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া প্লাস্টিকের পলিথিন প্রকৃতিতে না মিশার কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। ফলে জমিতে চাষযোগ্য উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। প্লাস্টিক মানবজাতির জন্য হুমকি জানার পরও কিছুতেই এর উৎপাদ বন্ধ হচ্ছে না। এ প্লাস্টিক বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট ও মানুষের রোগ বৃদ্ধি কমানো সম্ভব হবে না। ফলে প্লাস্টিক বর্জন করুন, এ স্লোগানে পুরো বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে দূষণ ‘কর’ প্রয়োগ ও বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যদিও আমাদের জীবনে প্লাস্টিকের দ্রব্যের ভূমিকা স্বীকার্য, তবে তা ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিমিতি আবশ্যক।
প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করা এবং প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কমিউনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করাসহ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ/সীমিত করতে হবে।