নীলফামারীর সদর উপজেলার কাজিরহাট ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার সাড়ে ১২ একর জমি পরিকল্পিতভাবে সাজানো নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানির দামে (স্বল্প মূল্যে) চুক্তি প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) গুটি কয়েকজন মানুষ নিয়ে নিলাম প্রক্রিয়ার আয়োজনের মাধ্যমে মাদ্রাসার জমি চুক্তি প্রদান করেন অধ্যক্ষ। মাদ্রাসার নামে অধ্যক্ষ সাড়ে ১২ একর জমি থাকার কথা জানালেও স্থানীয়দের দাবি প্রায় ১৭ একর জমি রয়েছে মাদ্রাসার নামে। সরকারি নিলাম মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে মাদ্রাসার অফিস সহায়ক সোহাগ ইসলাম ও অধ্যক্ষের চাচাতো ভাই পাকের হাট মাদ্রাসার প্রভাষক নুরুল ইসলামকেও এসব আবাদি জমি নামমাত্র মূল্যে চুক্তি আকারে প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, নিলামের মাধ্যমে জমি চুক্তি প্রদানের ব্যাপারে এলাকায় করা হয় নি প্রচারনা। জানেন না অধিকাংশ স্থানীয় জনগন। লোক দেখানো নিলাম প্রক্রিয়ায় এলাকার ৫০জন মানুষও ছিল না উপস্থিত। অধ্যক্ষ তার পছন্দের কিছু মানুষকে প্রতিবারের ন্যায় বিভিন্ন কৌশলে জমি চুক্তি প্রদান করেছেন। এবারও শুধু লোক দেখানো নিলাম প্রক্রিয়ার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মাদ্রাসার নামের পুকুর ও বাজারের চুক্তি প্রদান করেন না অধ্যক্ষ। এক ব্যক্তি একাধিকবার নাম মাত্র মূল্যে এসব জমি চুক্তি নেন।
জমি চুক্তির নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া মিলু হোসেন নামে এক ব্যক্তি জমি চুক্তি নিতে এসে ফেরত চলে যায়। যে জমি নিলামের মাধ্যমে তিনি চুক্তি নিতে এসেছিলেন সেটি নিলাম প্রক্রিয়ায় তোলাই হয় নি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে অধ্যক্ষ তার পছন্দের মানুষ ও নিজস্ব স্টাফদের পানির দামে জমি চুক্তি দিয়ে আসছেন। আমরা বেশি টাকা দিতে চাইলেও আমাদের কথা শুনেন না। আমি আজকে এসেছিলাম আক্কাজ নামে এক ব্যক্তি ১৩ বিঘা জমি চাষ করে সেটির চুক্তির নিলামে অংশগ্রহন করার জন্য। কিন্তু আজকে ওই জমি নিলামে উঠানোই হয় নি। আর উঠানো হবে বলে আমার মনে হয় না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান,‘অধ্যক্ষের যোগসাজশে নামমাত্র মূল্যে এসব চুক্তি প্রদান করা হয়। অফিসিয়ালি এসব জমি অল্প দামে প্রদান করে অধ্যক্ষ বাকি টাকা নিজের টাকা পকেটে ভরেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় লোক দেখানো নিলামে জমি চুক্তি প্রদান প্রক্রিয়া শেষে নীলফামারী সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.নুরুল আমিনকে মধ্যাহ্ন ভোজ করানো নিয়ে ব্যস্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করে নিলাম প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সময় নেই জানিয়ে দ্রুত মাদ্রাসা থেকে চলে যান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কাজিরহাট ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আশরাফ আলীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাদ্রাসার জমির ব্যাপারে কোনো ধরনের তথ্য প্রদান করবেন না বলে জানান। নিজেকে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা জামায়াতের নেতা দাবি করে তার সঙ্গে বুঝে শুনে কথা বলার হুমকি প্রদান করেন তিনি।
মাদ্রাসার গর্ভনিং বডির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন,‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনি জানালে আমি খতিয়ে দেখবো। চুক্তি প্রদান করার বিষয়ে কোনো অনিয়ম করা হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’