
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের অন্যতম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘সৈয়দপুর প্লাজা সুপার মার্কেট’ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দোকানের পজিশন বিক্রি করায় কোটি টাকার অধিক ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি দিয়েছে মার্কেটের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এস.আর ট্রেডিং।
জানা যায়, ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারি ওই মার্কেটের ৩ একর ৪০ শতক জমি ১কোটি ৪০লাখ এস.আর ট্রেডিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল হক ভূঁইয়ার কাছে বিক্রি করা হয়। অথচ এটি ছিল সরকারি জমি এবং সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল এটি স্থানীয় পৌরসভা অথবা সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। ২০০৪ সালে তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ এখানে মসজিদ ও ক্লিনিক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর মার্কেটটি উদ্বোধন হলেও, সেখানে মসজিদ বা ক্লিনিক স্থাপন করা হয় নি। উল্টো এর স্থলে প্রায় দেড় হাজার দোকান তৈরি করে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এসব দোকান বিক্রি করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি দোকান প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে দোকান কিনলেও, এখনো তাদের নামে দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়নি। পজিশন বিক্রির জন্য সরকারের আইন অনুসারে দলিল রেজিস্ট্রি না করে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে দলিল লিখে দোকানগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। অপরদিকে একই পজিশন যখন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে দেওয়া হয়েছে, তখন সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে দলিল তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তা করা হয় নি। যার মাধ্যমে কোটি টাকার ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে প্রতারিত হয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও ‘এস.আর ট্রেডিং’ নিজেকে রেজিষ্ট্রার্ড কোম্পানী দাবি করলেও সেটি ভূয়া বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রকৃতপক্ষে এই কোম্পানীর কোনো রেজিষ্ট্রেশন নেই।
তারা আরও জানান, কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন সঠিক উত্তর মেলেনি। বরং, তাদেরকে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। মার্কেটে যেখানে লিফট স্থাপন করার কথা থাকলেও তা আজও নির্মিত হয়নি। উল্টোপৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই বিল্ডিংটি দিনের পর দিন আরও প্রসারিত করা হচ্ছে। সাইকেল গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জায়গা সংকুচিত করা হয়েছে, যার ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি, মার্কেটে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার অভাব এবং অন্যান্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে মার্কেটের দেখভালকারী ব্যক্তি গুলজার আহমেদ এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। এস.আর ট্রেডিং এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ভূইয়া ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল হক ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বর চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন।