দেশের কেনো মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশের কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধের এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেয়া হয় নি। কিন্তু নীলফামারী মেডিকেল কলেজ সহ ছয় টি মেডিকেল কলেজ বা এর বাইরে অন্য যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যেখানে মান সম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া সম্ভব না হয়। তাহলে অবশ্যই আমাদের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এবং এই সিদ্ধান্ত গুলো কিন্তু সবার ভালোর জন্য। আমরা চাই না মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন চিকিৎসক তৈরি হোক যেখানে তারা মানসম্পন্ন চিকিৎসা দিতে পারবে না। কারণ হচ্ছে আমরা যদি যথাযথ শিক্ষা দিতে না পারি তাহলে যথাযথ চিকিৎসক হবে না। আমাদের প্রথম চেষ্টা অবশ্যই অবশ্যই এই মেডিকেল কলেজগুলোর মান উন্নয়ন করা।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের যে ৩৭টি মেডিকেল কলেজ আছে তার মধ্যে ৬টি নবীন মেডিকেল কলেজের মধ্যে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ একটি। যেগুলো ২০১৮ সালে দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই মেডিকেল কলেজ গুলো এখনও পরিপূর্ণ অবকাঠামো গড়ে উঠা সম্ভব হয় নি। ২০১৮ সালে তৎকালিন সরকার যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই মেডিকেল কলেজগুলো স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায় যখন ২২-২৩ সালে এসে এক সিদ্ধান্তে মেডিকেল কলেজগুলোতে এক হাজার ৩০টা আসন বাড়িয়ে ফেলা হয়। এটার জন্য যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেটি নেওয়া হয় নি। এর কারণে আমার মেডিকেল কলেজগুলো ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। একটা মেডিকেল কলেজ যে পরিমান শিক্ষার্থীর জন্য উপর্যুক্ত তার থেকে অনেক পরিমাণে বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে চলতে হচ্ছে।’
রেজাল্ট দিয়ে মানদÐ বিচার করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রেজাল্ট দিয়ে মানদÐ বিচারের বিতর্কে আমি যাব না। কারণ শুধু রেজাল্টই সব সময় মানের প্রতিফলন ঘটায় না। আমি কোন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিচ্ছি। কিভাবে ক্লাস করছি। শুধু রেজাল্ট দিয়ে এটা বলা যাবে না। কঠিন একটা পরিস্থিতিতে আমি যা পারফর্ম করব, একটা সহজ পরিস্থিতিতে নাও করতে পারি। সুতরাং কোন মেডিকেল কলেজের রেজাল্ট ভাল বা খারাপ এটা মানদন্ড নয়। আমরা তো অন্য অনেক কিছু বিবেচনা করব। অবকাঠামো কেমন আছে, শিক্ষকের সংখ্যা কিরকম, ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি, পারফরমেন্স কিরকম? পরীক্ষার সময় আমি যদি একজন উদার পরীক্ষক হই, আমি অনেককে পাস করে দিতে পারি। আমি শিক্ষাটা ভালো করে দিব। সেটা মূল, পরীক্ষাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা যদি ভাল করে দেই এবং ভালো করে পরীক্ষা নেই। দ্যাট ইস আইডিয়াল। কিন্তু আমি শিক্ষা দিলাম না, পরীক্ষার সময় আমি খুব দয়া করলাম। তাইলে কিন্তু রেজাল্ট ভাল হয়ে যেতে পারে। ফলে শুধু রেজাল্ট দিয়ে আমরা বিবেচনা করবো না। সবকিছুই বিবেচনা করছি আমরা।’
এর আগে সকালে নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজে সম্মেলণ কক্ষে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জিম্মা হোসেনের সভাপতিত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। মতবিনিময় সভায় নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ সার্বিক সমস্য মহাপরিচালকের কাছে তুলে ধরেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরিদর্শণ শেষে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চারটি গাছের চারা রোপন করেন মহাপরিচালক। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা) ডা. মাসুদুর রহমান, উপপরিচালক (সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ) ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহসহ রংপুর ও দিনাজপুর সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষগণ উপস্থিত ছিলেন।
#