বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও নীলফামারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেছেন,‘গত আঠারো বছর যাবৎ এই ফ্যাসিস্ট মাফিয়া সরকার অপচয় করেছে। তারা হত্যার মাধ্যমে জীবনের অপচয় করেছে, তারা ধ্বংস করেছে দেশের অর্থনীতিকে। লুটপাট করে নিয়ে গেছে তারা। ধ্বংস করেছে এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, তারা আইন-আদালত ধ্বংস করেছে। এমন কোন সেক্টর নেই তারা ধ্বংস করে নাই।’
শনিবার (১৭ মে) দীর্ঘ ১৮ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও নিজ জেলা আগমন উপলক্ষে নীলফামারী জেলা বিএনপির আয়োজনে গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন,‘আজকে সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে ভাই বোনেরা এই সংস্কারের বিষয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান অনেক আগেই ৩১ দফার একটি সংস্কারের প্রস্তাব আপনাদের সামনে তুলে ধরেছেন। আমাদের বিএনপির চেয়ারম্যান আপনাদের সামনে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। আমরা চাই যে, এই সরকারকে আমরা যেভাবে সহযোগিতা করছি সেই সহযোগিতা দেশের আপামর জনগণও করছে। বিএনপির এই সংস্কারের প্রস্তাবকে সঙ্গে নিয়ে আরও অন্যান্য দলের যে সংস্কার আছে, সেগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংক্ষিপ্ত করে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পন্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।’
একটি বিশেষ দলের ইঙ্গিত করে তুহিন বলেন,‘আমরা সবাই চাই এই দেশ পরিচালিত হোক সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে নির্বাচন হয়। কিন্তু আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সরকারের ভেতরেও নানাবিধ চিন্তা ধারা, নানাবিধ বক্তব্যও দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশেষ বিশেষ মহল বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার নিয়ে ব্যস্ত। এখন বলে বিএনপি নাকি চাঁদাবাজি করছে। আর অন্য কোন দল যখন চাঁদা নেয় তখন নাকি সেটা হয় হাদিয়া। ব্যাংক কারা দখল করেছে। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি বড় বড় ব্যাংক, বড় বড় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ দলের লোকেরা দখল করছে।’
নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘এই সরকার বলে সংস্কার করছে। এই সরকার নাকি বৈষম্য দূর করছে। আমি তো নিজেই সরকারের বৈষম্যের শিকার। কিন্তু বৈষম্য তারা দূর করতে এখনো পারেনি। আমরা আশা করব যে সরকার আরো সিরিয়াস হবে বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে। অন্তত নির্বাচনের ব্যাপারে সিরিয়াস এবং আমরা চাই গণতান্ত্রিক উপায়ে সকলকে নিয়ে জনগনের সকলের আকাক্সক্ষা যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়।’
নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি দলের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন,‘ একটা দল আপনারা জানেন খুব অল্প দিন আগে তাদেও সকল কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত বিচার শেষ না হয়। দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন, অনেক সমর্থক আছে যারা হয়তো বা খারাপ না। তাদের নেতা কর্মী, তাদের সর্বোচ্চ লেভেলের যারা নেতা কর্মী ছিলেন তাদের খারাপ কর্মকান্ডের জন্য আজকে তারাও এই রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আর কোন দল এরকম নিষিদ্ধ হোক এটা আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে চাই না। আমরা চাই যে একটা গণতান্ত্রিক চর্চা, মানুষের অধিকার তারা প্র্যাকটিস করুক।’
রংপুর বিভাগ অবহেলিত উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এই নীলফামারী ও রংপুরের মাটিতে আমরা আর অবহেলিত থাকতে চাই না। নীলফামারী রংপুর অঞ্চলের মানুষ আমরা বহুদিন ধরে পিছিয়ে আছি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ওই নোয়াখালী ,কুমিল¬া , ঢাকার মানুষরা উন্নত হয়। তাদের বাচ্চারা দেখা যায় যে বড় হয়ে বড় বড় চাকরি পায় আর আমাদের বাচ্চারা এখানে পড়ে থাকে। আমাদের এখানে বড় বড় হাসপাতাল নাই কেন। বিশ্ববিদ্যালয় নাই কেনো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় এখন বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমাদের কি অধিকার নাই । এটা আদায় করতে হলে আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক জহুরুল আলমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, আমিনুল ইসলাম বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির প্রতিটি ইউনিটের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে ফুল ও সম্মাননা স্বারক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।