• বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন |

সম্পাদকীয় – মানুষ মানুষের জন্য

মাহাদী হাসান মানিক / ২৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

নতুন বছরের শুরু থেকেই যেন শীত যেকে বসেছে। তাতে শুধু মানুষ নয়, গবাদিপশু, হাঁস মুরগি এমনকি জমির ফসলও আক্রান্ত হচ্ছে। বয়স্ক ও শিশুরা শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন। কৃষক নানা কীটনাশক ছিটিয়ে ফসলের সুরক্ষা করতে চেষ্টা  করছেন। তাতে যে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, সেজন্য তারা চাষ-কৃত আলু ও বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য কৃষকরা চিন্তায় আছেন।

কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সাথে কেউ পেরে উঠছেন না। বাংলাদেশে শীত নামে মূলত হিমালয় পেরিয়ে পঞ্চগড় দিয়ে শীতল  বাতাস আসার কারণে। একই ভাবে সিলেটে মেঘালয় থেকে আসা শীতল বাতাস প্রবেশ করে তাপমাত্রা কমায়। বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের পর থেকে জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কুয়াশা বেড়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার বড় অংশ জুড়ে মাসের বেশির ভাগ সময় ওই কুয়াশা দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে শৈত্য প্রবাহ বয়ে না গেলেও তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে।

আগে শুধু উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে বেশি শীতের অনুভূতি হলেও এবার দেশের অর্ধেকের চেয়ে বেশি এলাকায় শীতের অনুভূতি তীব্র শুধু কুয়াশার কারণে। এ প্রবণতাকে আবহাওয়া-বিদরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন। বিশেষ করে জানুয়ারি শুরু থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের ওপর একটি ভারী কুয়াশার চাদর ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে দেশের ভেতরেও নিচু মেঘ বা লো ক্লাউড তৈরি হচ্ছে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলা ও ধোঁয়া এর সাথে যোগ হচ্ছে।

এ কারণেই অস্বাভাবিক কুয়াশা তৈরি হচ্ছে, যা দিনের তাপমাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।  ফলে মানুষ যেমন তীব্র শীতে কষ্ট পাঁচ্ছে, তেমনি দেশ জুড়ে তীব্র শীতে ফসল ও পানিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। মাঠে এখন বোরো ধানের বীজতলা রয়েছে। এ ছাড়া আলু, শর্ষে, গম, ভুট্টা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেয়াজ, রসুন, শিম, লাউ, মিষ্টি আলু, টমেটো, সূর্যমুখী, শাকসবজি সহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল মাঠে রয়েছে। তীব্র এ শীতের সময়টাতে সূর্যের আলো না থাকা এবং ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন এলাকার বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে।

আলু খেতে নানা ধরনের রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে তীব্র ঠাণ্ডায় অনেক প্রাণীই  নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, পাতলা পায়খানাসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এবার শীতে মানুষকে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। আর পশু-পাখির শীতের কারণে পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছে না। ফলে পশু-পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। যা প্রাণী সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে একদিকে যেমন এগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে এসব প্রাণী নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। প্রকৃতির এ দুর্যোগের পূর্ব প্রস্ততি কারোই ছিল না।

ফলে পশু পাখিকে কোনো ধরনের টিকা দেওয়া সম্ভব হয় নি। তবে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা হিসেব গরু, ছাগল, ভেড়ার ঘরে যাতে বাতাস না লাগে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের সুরক্ষায় কীট নাশক ছিটানোসহ কুয়াশা ঝেড়ে ফেলতে সকাল বিকাল পানি ছিটানো যেতে পারে। শ্রমজীবী মানুষেরা ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাঁচ্ছেন।

তারা ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে কাজহীন সময় কাটালে পেটের ক্ষুধা  নিবারণ করতে পারছেন না। এজন্য সরকারি উদ্যোগে তাদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ সহ খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। করোনাকালে সরকার সহ বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে অনেকেই দাঁড়িয়েছে, সে দৃষ্টান্ত রয়েছে। ফলে প্রচণ্ড এ শীতে আবারো সবাইকে কষ্ট পাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ মানুষ মানুষের জন্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category