ফের নতুন একটি অপমৃত্যুর অধ্যায় আমাদের স্মৃতিতে গেঁথে গেল। হোক নিমতলী অথবা চকবাজার। গত বছরই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই হয়েছে। এখনো ঢাকাসহ সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ২২৭৩টি কারখানা অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ওইসব কারখানায় নেই নিরাপত্তার বালাই। কোনো আইনেরই তোয়াক্কা করছে না এসব কারখানা র্কর্তৃপক্ষ। ভবনগুলোতে নেই বিকল্প সিঁড়ি। নেই কোনো নজরদারি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কারখানার মালিকদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় নেওয়া যাচ্ছে না শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। বেইলি রোড ট্র্যাজেডির মতো দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই শুধু টনক নড়ে সরকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট নজরদারি র্কর্তৃপক্ষের। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিছুদিন পরই যেন বোবা হয়ে যান সংশ্লিষ্টরা।
একইভাবে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহঅগ্নিকাণ্ডের পর যেসব ভবন, রেস্টুরেন্ট ও কলকারখানা অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলোর তালিকা হালনাগাদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে চকবাজারের চূড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, গুলিস্তানের বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডিসহ একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কোনোটির সঠিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পায়নি এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এই সব অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা বা স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড নয়, এসব কার্যত হত্যাকাণ্ড।
কেননা বিল্ডিং নির্মাণ, দাহ্য পদার্থ রাখা, অনিয়ন, অব্যবস্থাপনা দেখভালের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন, রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের। সেখানে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিস কোনো সংস্থায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। আবার একেবারেই যে কোনো কাজ হচ্ছে না সেটি নয়। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কোটেজ অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস দাবি করছে তারা তিন দফায় ভবন মালিককে সতর্কতা নোটিশ দিয়েছে। তিন দফায় সতর্কতা নোটিশ দেয়ার পর তারা কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তাহলে ফায়ার সার্ভিস কি দায় এড়াতে পারে? এসব অগ্নিকাণ্ড নামের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাহলে দায়ী কে এবং কারা? এখনো অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট-শপিংমল। এগুলোর মধ্যে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। পরিদর্শন করা মার্কেট ও শপিংমলের মধ্যে প্রায় ৭৬ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে। তবে একটু সচেতন হলেই অগ্নিদুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সাধারণ যে কারণগুলোতে সারাদেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
এতে প্রাণহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জলাধার নির্মাণ করে, সেখানে জলের সরবরাহ রাখতে হবে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় সেখান থেকে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ পেতে পারে। ফায়ার সার্ভিসকে অত্যাধুনিক সরঞ্জামে আরো আধুনিক করে গড়তে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন ও পরিপালন একান্ত আবশ্যক। প্রতিটি মার্কেটে অগ্নি নির্বাপক সিস্টেমসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় মনিটরিং করতে হবে।