• বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন |

সম্পাদকীয় – খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক বন্ধ করতে হবে

মাহাদী হাসান মানিক / ২২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে। অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা সেই খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে বিষ ও ভেজাল মিশানো হয় না।

উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি। খাদ্যে যারা ভেজাল করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ একজন সন্ত্রাসী একজনকে খুন করেন। কিন্তু খাদ্যে যারা ভেজাল দিচ্ছে তারা জাতিকে ধ্বংস করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাইরে বেশি এসব কেমিক্যালের ব্যবহার হচ্ছে। এক গবেষণা সূত্রে জানা যায়, আমাদের শরীরে ৩৩ শতাংশ রোগ হওয়ার পেছনে রয়েছে ভেজাল খাদ্য। পাঁচ বছরের নিচে শিশুর ৪০ ভাগ রোগ হয় দূষিত খাদ্য থেকে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত নানা পর্যায়ে দূষিত হয়। এর মূল কারণ অসচেতনতা।

গাইনী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় কেমিক্যাল সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্যসামগ্রী খাওয়ার ফলে মা এবং শিশু উভয়ই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের অনেক রোগী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা পাচ্ছেন। ফলে ফল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’ জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়।

এসব রাসায়নিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাকসবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব।

হলুদ ও লবণে সীসাসহ আরো কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারী করা হয়। খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যেমন জরুরী তেমনি মানুষের মধ্যে অধিক সচেতনতাও জরুরী। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category