ads
  • সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন |

ত্রাণের জন্য অপেক্ষা

অনলাইন ডেস্ক / ৯৩ Time View
Update : সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন

দেখা মিলেছে সূর্যের। ধীরে ধীরে নামছে পানি। দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকা। সন্ধান মিলছে স্বজনের। একদিকে যখন এমন স্বস্তি, অন্যদিকে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। ফেনীর ছয় উপজেলার চারটি থেকে পানি নামছে। যে পানি অন্য দুই উপজেলা হয়ে পড়ছে সাগরে। আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে খাদ্য সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সঙ্গে সুপেয় পানি ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট।

সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ পৌঁছানো হলেও চাহিদার তুলনায় সেটি অপ্রতূল। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার মানুষের খাদ্যের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত কয়েকদিনে প্লাবিত ফেনীসহ দেশের ১২ জেলা। পানিবন্দি অর্ধকোটির বেশি মানুষ। মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। একের পর এক তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ফসলি ভূমি, সড়ক সবই নিমজ্জিত বন্যার পানিতে। ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ নেই অধিকাংশ দুর্গত এলাকায়। পানি ও বিদ্যুতের অভাবে অচল হয়ে পড়েছে অসংখ্য মোবাইল টাওয়ার। যার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গত এলাকার মানুষ।

গতকাল ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরশুরাম ও ফুলগাজীরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন গত পরশু থেকে পানি কমছে ধীরে ধীরে। স্বস্তি ফিরছে নাগরিকদের মধ্যে। তবে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সুপেয় পানির এখনো অভাব রয়েছে। তাই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে শিশু খাদ্যেরও অভাব তীব্র। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারিভাবে অনেকে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পরশু রাতে পরশুরামের স্থানীয় বাসিন্দা সাদ বিন কাদের জানিয়েছেন, পানি কমছে ধীরে ধীরে। তবে এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে শিশু খাদ্যের অভাব প্রকট। অনেক শিশু সুপেয় পানি ও খাদ্যের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ইকরাম হোসাইন নামে পরশুরামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা গতকাল দুপুরে জানান, তিনি শহর থেকে পরশুরামে যেতে চেয়েও পারেননি। রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সবাইকে যেতে দিচ্ছে না। তারা সকলকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

অন্যদিকে ছাগলনাইয়া ও সদরেও পানি কমতে শুরু করেছে। সেলিনা আক্তার নামে শহরের শান্তিধারা এলাকার এক গৃহিণী বলেন, শহরে পানি কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নতির দিকে। আশা করছি এভাবে আর দুই একদিন থাকলে শহরের মানুষের দুরবস্থা দূর হবে। তবে সদরের কিছু কিছু এলাকায় এখনো বানভাসিরা কষ্টে আছে। পানিবন্দি অনেক মানুষ নিজেদের বর্তমান অবস্থানকে সংকাপন্ন হিসেবে বিবেচিত করছেন। এ ছাড়াও এসব এলাকার মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছেন। বিশেষ করে সুপেয় পানির অভাববোধ করছেন বেশি। আতাউর রহমান নামে একজন জানান, তারা খাদ্য সংকটে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বাসা-বাড়িগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের প্রয়োজন। অন্যদিকে চার উপজেলায় যখন স্বস্তি তখন অন্য দুই উপজেলায় পানি বাড়ছে। ডুবে যাচ্ছে একের পর এক বসতঘর। আতঙ্কে দিন পার করছেন বাসিন্দারা। মূলত এসব এলাকা দিয়েই সাগরে পড়ছে পানি। আলাউদ্দিন নামে একজন জানান, তাদের এলাকায় সব ডুবে গেছে। সেখানে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে আরেক বাসিন্দা জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন। সুপেয় পানি ও খাদ্যেরও সংকট এখানে। এ ছাড়া দাগনভূঞা উপজেলায়ও বাড়ছে পানি। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে খাদ্যের হাহাকারও দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় পৌঁছেনি খাবার। যার কারণে কষ্টে আছেন সেখানকার মানুষ। মোমিন নামে একজন বলেন, তাদের এলাকায় কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। তিনি তার এলাকার জন্য ত্রাণ সহায়তা চেয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের গতকালও আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হয়েছে। উপজেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেটের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়াও দাগনভূঞা বাজারে অসংখ্য মানুষ ট্রাকে ট্রাকে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন।

দুপুরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ম্যানেজার এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, কাপ্তাই লেকে ১০৮ ফুট এমএসএল পর্যন্ত পানি উঠলে বিপদসীমার অবস্থা সৃষ্টি হয়। শনিবার ২টা পর্যন্ত পানি ১০৭ দশমিক ৬৩ ফুট পর্যন্ত উঠেছে। সন্ধ্যার মধ্যে পানি ১০৮ ফুটে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় ১৬টি গেটের ৬ ইঞ্চি করে ছেড়ে দেয়া হবে। সবাই সাবধানে থাকুন। অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। এ ছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের ১১টি জেলায় ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি পরিবারের ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category