মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু,স্টাফ রিপোর্টার,ডোমার নীলফামারীঃ নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ২নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কচুয়ার ডাঙ্গা এলাকায় স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী রুবেল ইসলাম (৩৫) কর্তৃক স্ত্রী আসমা খাতুন (২৮) কে বেদমভাবে মেরে রক্তাক্ত জখম করে।এসময় এলাকাবাসী আসমাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করায়।
এলাকাবাসী জানায়, ১৭ই এপ্রিল বুধবার বিকেলে স্বামী রুবেল ইসলামের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী আসমা খাতুন জানায়, তার স্বামী রুবেল ইসলামের সাথে বগুড়ার একটি মেয়ের দীর্ঘদিন যাবত পরকীয়া প্রেম চলে আসছিল, এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুরে রুবেল তার পরকীয়া প্রেমিকার সাথে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলছিল, এসময় আমি সেখানে উপস্থিত হলে আমার স্বামী তার সেই পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলতে বলে, আমি তার সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করিলে আমার স্বামী আমাকে বেদমভাবে মারপিট সহ রক্তাক্ত জখম করে, এসময় আমার আত্ন চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে রুবেলের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে এবং একই এলাকার মহিলা মেম্বারনী মুক্তা আমাকে স্থানীয় একটি ঔষধের দোকানে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এরপর আমি সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে রুবেলের বিচারের দাবি জানাই। এরপর আমার পরিবারের লোকজনকেও ডাকি এবং বলি চেয়ারম্যানের সাথে এসে আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যাও।এরপর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমার পরিবারের লোকজনসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চকিদারসহ আমার স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে, আমার মারপিঠের অবস্থা দেখে আমার বড়ভাই সহ্য করতে না পেরে উপস্থিত সকলের সামনে আমার স্বামীকে একটা থাপ্পড় দেয়, এরপর আমার স্বামী চেয়ারম্যান মেম্বারদের উপস্থিতিতে আমার ভাইকে মারার জন্য লাঠি খুজতে যায়, অথচ চেয়ারম্যান আমার স্বামীর বিচার না করে সকলের উপস্থিতিতে আমার ভাইকে মারধর করে।
এরপর আমাকে সেখানে থেকে নিয়ে আসার প্রক্কালে বোর্ডের পাড় এলে আমার তাওয়াই মোনা আমার মারপিটের অবস্থা দেখে চেয়ারম্যানের সামনে প্রতিবাদ করে। সেদিন রাতে আমার তাওয়াই মোনাকে কোন কিছু করে নাই। অথচ পরদিন দুপুরে শুনলাম বোর্ডের পাড়ে চেয়ারম্যানের লোকজন মোনা তাওয়াইকে প্রচন্ড মারপিট করে জখম করেছে, সেও বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি আছে।
ভুক্তভোগী আসমা খাতুন আরও জানায়, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পারিবারিক ভাবে ৪নং ওয়ার্ডের কচুয়ার ডাঙ্গা এলাকার আইজুল ইসলামের ছেলে রুবেলের সাথে আমার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
দাম্পত্য জীবনের বর্তমানে আমার ২টি মেয়ে রয়েছে বড় মেয়ের বয়স ৮ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৩ বছর। বিয়ের পর সে বগুড়ায় গিয়েছিল ধান কাটার কাজে সেখান থেকে তার পরকীয়ার উৎপত্তি। এখন সে লেগুনা গাড়ি চালায়, বর্তমানে আমার স্বামী পরকীয়া প্রেমের পাশাপাশি মোবাইলে কেসিনো জুয়ায় আসক্ত হয়েছে। গন্ডগোলের দিন সে বাড়ি থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইলে ক্যাসিনো জুয়া খেলে হেরে গেছে। পরিশেষে ভুক্তভোগী আসমার তার স্বামী রুবেল ইসলামের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী আসমা খাতুনের স্বামী রুবেল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার স্ত্রীকে ডাংমারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি আমার বৌকে মেরেছি, এটা আমার দোষ, এখন আপনারা আমার বৌকে বলেন আমার ভাত সে খাবে কিনা? এটাই আমার শেষ কথা।
ঘটনার বিষয়ে ২নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম রোমান ভুক্তভোগী আসমা খাতুনের মারপিঠের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এর আগে কয়েকবার তাদের মিমাংসা করে দিয়েছি। গত পরশুদিন শুনি রুবেল মেয়েটিকে কোমর থেকে পায়ের নিচে পর্যাপ্ত মারপিট করেছে।
এরপর আমি ইউনিয়ন পরিষদ এসে দেখি মেয়েটা রক্তাক্ত অবস্থায় পরিষদে বসে আছে। এরপর আমি মহিলা মেম্বারকে দিয়ে মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াই, এরপর মেয়েটি পূর্ণরায় পরিষদে এসে রুবেলের বিচায় দাবি করে। তারপর আমি রুবেলের সাথে মুঠোফোন কথা বলি তখন রুবেল আমাকে বলে আমি দুরে আছি। তখন আমি রুবেলকে বলি তুমি যতদুরেই থাক আমার সাথে দেখা করো। এরপর আমি পরিষদের মেম্বারদের দিয়ে মেয়েটিকে রুবেলের বাড়ির পাঠিয়ে দেই। এবং তাদেরকে বলি আপনাদের সাথে রুবেলের দেখা হলে ওকে বাসায় থাকতে বলেন আমি আসতেছি, পাশাপাশি মেয়ের পরিবারকে এখানে আসতে বলেন। এরপর মেম্বাররা রুবেলের সাথে যোগাযোগ করলে রুবেল তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় আমি তাকে ডিভোর্স দিব, ওকে বলেন আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে।
এরপর আমি মেম্বারদেরকে পরিষদে চলে আসতে বলি, ওই দিন আমার এলাকার ২জন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছে, শত ব্যস্ততার মধ্যেও এরপর আমি পরিষদে এসে দেখি মেয়ে পক্ষের প্রচুর লোকজন পরিষদে জমা হয়েছে এবং তাদের দাবি আমরা মেয়েটাকে আনতে যাবো। আমি তাদেরকে নিষেধ করি আপনাদেরকে ওখানে যেতে হবে না, রাতটা দেখি কি হয়। আর আপনারা একটা দরখাস্ত দেন আমি রুবেলের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এরপর আমি মেম্বারদের সাথে পরামর্শ করি, মেম্বাররা তখন সকলে সম্মতি ঞ্জাপন করলে আমি মেম্বারা গ্রাম পুলিশসহ আমার সাথে আরও ১০/১৫ জন লোক নিয়ে রুবেলের বাড়িতে যাই মেয়েটিকে আনতে। এসময় আমাদের সাথে যে মেয়েটির বড়ভাই ছিল সেটা আমি খেয়াল করিনি, রুবেলের বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়েটা বাইরে চেয়ারে বসে আছে আর রুবেল তার গাড়িতে তালা লাগাচ্ছে এরপর আমি রুবেলকে গালাগালি করি, এরই এক পর্যায়ে মেয়েটির বড়ভাই আলম রুবেলকে দেখতে পেয়ে তাকে মারপিট শুরু করলে আমি তো ভিষণ চিন্তায় পরে যাই, এটা কি হলো এরপর আমি মেয়েটির বড়ভাইকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।
এরপর রুবেলের বাড়ি থেকে মেয়েটিকে নিয়ে আসার পথিমধ্যে কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোনা আমাকে বলে এখানে কিসের এতো চিল্লাচিল্লি, আমি বললাম ভিতরে কি হয়েছে তুমি যান, সে তখন আমাকে বলতেছে আমি সবি যানি, আর আমার এলাকায় ঢুকতে গেলে আমাকে বলে ঢুকতে হবে, আপনি কিসের চেয়ারম্যান, আপনি বালের চেয়ারম্যান একটা গন্ডগোল সমাধান করতে পারেননা।
আমি তখন তাকে বলেছি বেয়াদবি মূলক কথাবার্তা বলবানা, আর তোমার পাড়ায় ঢুকতে হলে তোমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। এরপর আমি কথা না বাড়িয়ে মেয়েটির বড়ভাই আলমের সঙ্গে রাগারাগি করে বললাম যে আপনারা যদি এখানে মারামারি করবেন তাহলে কেন আমাকে নিয়ে আসলেন। এরপর মেয়েটিকে রুবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সকলের উপস্থিতিতে মেয়েটির বড়ভাই আলমের হাতে দিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। পরদিন মোনার বিষয়টি আমাদের পরিবারের লোকজন শুনতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে যায়। এরপর তারা পরিষদের দিকে গেলে মোনাকে চায়ের দোকানে দেখতে পেয়ে তাকে ডেকে নিয়ে বলে যে আপনি চেয়ারম্যানকে আঙ্গুল তুলে কথা বলেন, আর বলেন বালের চেয়ারম্যান একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি শুরু হয়, এর মধ্যে আমার এক লোককে প্রচন্ড ভাবে মারপিট করেছে। তবে আমি আমার লোকজনের কাজ থেকে এটা আশা করিনি।
আমার ছেলেদের ২টা মোটরসাইকেল ভেঙ্গে গুড়া করে দিছে, তবে আমি বলেছি আমার লোকজন যদি ভুল করে থাকে তাহলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিব। তবে ঘটনার বিষয়ে আমি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ১নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালু ভাইকে বলেছি উনি দ্বায়িত্ব নিয়েছে বিষয়টি মিমাংসা করে দেবেন। তবে রুবেল যে তার বউকে মেরেছে তার পরিবার যদি আমাকে দ্বায়িত্ব দেয় তাহলে আমি রুবেলের উপযুক্ত বিচার করবো।